সুন্দর জীবনের জন্য রাগ কন্ট্রোলের গুরুত্ব অপরিসীম

রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে,তাই চলুন আজ শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করব সেই বিষয়ে জেনে নেই 


*রাগ সংবরণকারীর মর্যাদা :

রাগ সংবরণকারীর মর্যাদা সম্পর্কে, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,' যে ব্যক্তি কোন রাগকে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হওয়া সত্বেও দমন করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সমস্ত সৃষ্টি কুলের সামনে ডেকে যেকোনো হুর পছন্দ করে নেওয়ার অধিকার দিবেন।"(ইমন মাজাহ:৪১৮৬)।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহর কাছে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টের উদ্দেশ্যে রাগ সংবরণ করা চেয়ে বড় কোন সংবরনে বেশি সওয়াব নেই।"ইবন মাজাহ:৪১৮৯)

*রাগ কিভাবে দমন করবেন?

শয়তান মানুষের বিনাশ এবং ধ্বংসের মধ্যে অনেকে  আনন্দ পায়। শয়তানের শয়তানি কুমন্ত্রণায় পড়ে মানুষ বিভিন্ন ধরনের অন্যায় কর্মে লিপ্ত হয়ে যায়। শয়তানের অস্ত্রগুলোর মধ্যে প্রচন্ড রাগ এবং ক্রোধ অন্যতম। রাগ কন্ট্রোল করার জন্য রাগের সময় করণীয় সম্পর্কে যেসব আমলের কথা বলেছেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেগুলো হল - 

(১) আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা। 

(২) শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন করা। 

(৩) চুপ থাকা।

(৪) ওযু করা 


আরো পড়ুনঃ কীভাবে শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন হয়

১.আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা :মানুষ শয়তানের কবল থেকে নিজেকে রক্ষার জন্যে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলেছেন। ওসমান ইবনু আবু শায়বা রা. ও সুলাইমান ইবনু সুরাদ রা. থেকে বর্ণিত। 

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সামনে দুই ব্যক্তি পাগলামি করছিল। আমরা ও তার কাছে বসা ছিলাম। তারা রাগান্বিত হয়ে  একজন আরেকজনকে গালি দিচ্ছিল তারা এতটাই রাগান্বিত  ছিল যে, তাদের চেহারা লাল বর্ন আকার ধারণ  করেছিল। 

এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম) বললেন -আমি একটি কালেমা জানি, যদি লোকটি তা পড়তো, তাহলে তার রাগ ও ক্রোধ চলে যেত। তখন লোকেরা ওই রাগান্বিত লোকদেরকে  বললেন (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি বলেছেন তা কি তুমি শুনছো না। তারা বলল আমি নিশ্চয়ই পাগল নই।'-(সহীহ বুখারী :৫৯৮৫)

২.শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন :রাগ মানুষের জীবনে বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে। তাই আমাদেরকে অবশ্যই রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন অত্যন্ত কার্যকরী একটি ভূমিকা পালন করে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এ বিষয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বলেছেন,যখন তোমাদের কারো রাগ উঠে, তখন সে যদি দাঁড়িয়ে থাকে, সে যেন তখন বসে পড়ে। যদি তাতে রাগ চলে যায়, তাহলে তো ভালো।আর যদি না যায়, তবে শুয়ে পড়বে।"(সুনানে আবি দাউদ :৪৭৮৬)

৩.চুপ থাকা :চুপ থাকলেন তো  বেঁচে গেলেন। একজন মানুষ রাগান্বিত অবস্থায় অনেক আজেবাজে কথা বলতে পারে, এ সময় যদি নিজেকে চুপ রাখতে পারে, অনেক গুনাহ থেকে বেঁচে যাবেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)  বলেন তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ কর। কঠিন করোনা। যখন তুমি রাগান্বিত তখন চুপ থাকো;যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো;যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো। (মুসনাদে আহমদ:৪৭৮৬)

রাগ ও ক্রোধ মানুষের জীবনের অন্যতম একটি মন্দ ও ক্ষতির দিক।রাগ যখন মাত্রা ছারিয়ে যায়, তখন সেটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একজন মানুষ যখন রাগান্বিত থাকে, আর সেই রাগান্বিত অবস্থায় নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে,এমতো অবস্থায় তার তখন, সে যে, কোন ধরনের অপরাধের সাথে নিজেকে অনাআসে জড়িয়ে পড়ে।রাগ মানবিক আাবেগের আংশ।অনিয়ন্ত্রিত রাগ মানুষের জন্য অনেক ক্ষতি এটি মানব জীবনে অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে এই বিষয়ে হাদিসে এসেছেন আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল সাঃ বলেছেন প্রকৃত বলবান ও শক্তিশালী বীর পুরুষ সে নয় যে কুস্তিতে কাউকে হারিয়ে  দেই।প্রকৃত বীরপুরুষ তো সে যে রাগকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। যে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে এবং অন্যকে ক্ষমা করে সেই তো প্রকৃত বীরপুরুষ। 

৪.ওযু করা :নবী করিম সাঃ এরশাদ করেন নিশ্চয়ই রাগ শয়তানে পক্ষ থেকে আসে। শয়তান আগুনের তৈরি। আর পানির দ্বারা আগুন নিভানো হয়। অতএব তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রাগান্বিত হয়, সে যেন অজু করে।( সুনানে আবু দাউদ :৪৭৮৬)

আবু হুরাইরা রা. বর্ণিত। তিনি বলেন  ব্যক্তি  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলল আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন রাগান্বিত হয়ো না। লোকটি আবার ও পূর্বের  পুনরাবৃত্তি করে বললেন আমাকে উপদেশ দিন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  প্রতিবারই।বললেন  রাগান্বিত হইয়ো না।সহীহ বুখারী :৬১১৬)।

*ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল( রহ)বর্ণনা করেন, নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের আরও উপদেশ দিয়েছেন,যদি তোমাদের মধ্যে কেউ রাগান্বিত হয়ে পরে তবে তাকে  নীরব থাকতে দাও। যদি কোন ব্যক্তি শান্ত ও নীরব থাকতে চাই, তাহলে সে যেকোনো ধরনের  অপ্রত্যাশিত ঘটনা  থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিল। 


আমাদের প্রিয় নবী করিম (সা:) তায়েফে গিয়েছিলেন, আশা করেছিলেন তায়েফবাসী তাঁর কথা শুনবে,তাঁকে  সহযোগিতা করবে।কিন্তু অভাগা তায়েফবাসী সহযোগিতার পরিবর্তে তিনি পেলেন অপমান।তার শরীরের থেকে রক্ত গড়িয়ে পায়ে গিয়ে জমাট বাঁধল।আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর কাছে একজন ফেরেশতা এলেন,আর ফেরেশতা তায়েফের দুই পাশের পাহাড় এক করে দিয়ে  তায়েফবাসীকে  হত্যা করার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু দয়ার নবী মায়ার নবী (সা:) এর উত্তর ছিল (না, তা হতে পারেনা) বরং আমি আশা করি মহান আল্লাহ তাদের বংশে এমন সন্তান দেবেন যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে, সঙ্গে শরিক করবে না।( সহীহ বুখারী :৪৫৪)।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url